বাংলাদেশিদের ই-মেডিকেল ভিসা দেওয়ায় লাভবান হবে পশ্চিমবঙ্গ
- By Anton Nag --
- 03 July, 2024
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন কয়েক লাখ বাংলাদেশি পর্যটক। পশ্চিমবঙ্গে আসলে তাদের পছন্দের থাকার জায়গা কলকাতা নিউমার্কেট এলাকা। রাজ্যে চিকিৎসার জন্য আসা বেশিরভাগ বাংলাদেশিই যান কলকাতার বাইপাস লাগোয়া মুকুন্দপুরের হাসপাতালগুলোতে।
মুকুন্দপুরে ছোট-বড় আট থেকে ১০টি বেসরকারি সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল রয়েছে। বাংলাদেশিরা কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসলে সাধারণত এসব হাসপাতালেই ভিড় করেন।
সদ্য দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় তার। বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আসা মানুষদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করা হবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলবে ভারতের ই-মেডিকেল ভিসা।
তবে চিকিৎসা করাতে আসা প্রায় সব বাংলাদেশির মুখেই একটি অভিযোগ শোনা যায়, সময়মতো ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। যত বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেন, ভিসা পান তার থেকে অনেক কম। ফলে চিকিৎসা করাতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
সময়মতো ভিসা না পাওয়ার অভিযোগের পরেও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করতে আসা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের মেডিকেল ভিসা দেওয়া হয়েছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশিকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিসা প্রদানের হার বেড়েছে প্রায় ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এ অর্থবছরে মেডিকেল ভিসা পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করতে আসা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে ম্যাক্স হেলথকেয়ারের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং চিফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার আনাস আব্দুল ওয়াজিদ জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীরা মূলত চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা ও দিল্লিতে যান। বাংলাদেশে ভারতীয় হাসপাতালগুলোর বরাবরই একটি সুখ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত ট্রান্সপ্ল্যান্ট, কার্ডিয়াক সায়েন্স, নিউরো, অর্থো এবং অনকোলজি সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় আমাদের ম্যাক্স হেলথকেয়ারের প্রতিনিধি রয়েছে। তারা রোগীদের ভারতে ভ্রমণের বিষয়ে সাহায্য করে থাকেন।
ওয়াজিদ বলেন, তবে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ থেকে রোগী আসায় সাময়িক ভাটা পড়েছিল। কারণ সেসময় কম ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। তাছাড়া মেডিকেল ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে প্রচুর আবেদন আসে। এর ফলে ভিসা পেতে রোগীদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়।
যে কারণে বাড়ছে বাংলাদেশি রোগী
ভারতে বাংলাদেশি রোগীদের আগমন বাড়ার পেছনে আকাশপথে যাতায়াত সুবিধার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে প্লেন চলাচল বাড়িয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়াত্ত এয়ারলাইন এয়ার ইন্ডিয়া। ২০২৩ সালের জুন মাসে সপ্তাহে যেখানে তিনটি ফ্লাইট চলতো, এখন সেখানে প্রতি সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট চলাচল করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে কলকাতায় থাকা, চিকিৎসা-সম্পর্কিত পরামর্শসহ সব কিছু মিলিয়ে যে প্যাকেজ দেওয়া হয়- সেটিও কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসার জন্য রোগীদের অনেকটাই আকৃষ্ট করে তোলে।
লাভের আশায় পশ্চিমবঙ্গ
কলকাতার অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ই-মেডিকেল ভিসা চালু হলে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পশ্চিমবঙ্গ। তবে রাজ্য সরকারকেও বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসা রংপুরের বাসিন্দা শেখ জামাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি গত গত রমজানে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেই ভিসা পেয়েছি কোরবানির ঈদের পরে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। কারণ অসুস্থতা তো বসে থাকছে না। সেদিক থেকে ই-ভিসা চালু হলে ভালোই হবে।
ফরিদপুরে বাসিন্দা তাপস মণ্ডল বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছি। প্রায় এক মাস অপেক্ষা করার পর ভিসা পেয়েছি। ই-ভিসা চালু হলে আমাদের জন্য ভালো।
নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ী নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, ভিসার জন্য যে ভোগান্তি হতো, ই-মেডিকেল ভিসা চালু হলে সেটি কমবে। এতে সবাই উপকৃত হবে। এটি খুব ভালো খবর।